মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩

ভূমিকম্পঃ তুরস্কের ভূমিকম্পে কেন এত প্রাণহানি ও ভবন ধসে পড়ল, সেখান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা ও করণীয়

গত ৬ ফেব্রুয়ারী ‘২০২৩ সোমবার তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এই শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পটির কেন্দ্র বা ইপিসেন্টার ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। প্রথম ভূমিকম্পটি ছিল খুবই শক্তিশালী রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৮। প্রায় চার ঘন্টাপর উক্ত অঞ্চলে আরেকটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৫। এভাবে ভূমিকম্পের পর অর্ধশতাধিক পরাঘাত (বড় ভূমিকম্পের পর ছোট ছোট ভূমিকম্প) হয়। 

তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলে আঘাত হানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলির মধ্যে অন্যতম। বেরকারি তথ্যমতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ, ৯০ হাজারের মত বিল্ডিং ধসে পড়েছে, অগণিত মানুষ শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিছে বসবাস করতে হয়েছে, স্কুল ও হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিশুরা। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মানুষকে নতুন করে জানতে আগ্রহ তৈরী করেছে ভূমিকম্প কি? কেন হয়? ভূমিকম্পের প্রবণতা, ঝুঁকি ও মোকাবেলায় আমাদের করণীয়। 

ভূমিকম্প কি ও কেন হয়?

ভূমিকম্প হল পৃথিবীর লিথোস্ফিয়ারে শক্তির আকস্মিক মুক্তির ফলে ভূপৃষ্ঠের কম্পন যা সিসমিক তরঙ্গ সৃষ্টি করে। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে যেমন; ভূপৃষ্ঠজনিত কারণ, আগ্নেয়গিরিজনিত কারণ, শিলাচ্যুতিজনিত কারণ। 

ধারনা করা হয়, পৃথিবীর সব স্থলভাগ আগে একত্রে ছিল, যা প্যানজিয়া নামে পরিচিত। এটি প্যান্থালাসা (Panthalassa) নামক একটিমাত্র মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগে কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত বলে ধীরে ধীরে তারা আলাদা হয়ে গেছে। এই প্লেটগুলোকেই ভূ-বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট। টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে আছে। 

ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে সাতটি প্রধান প্লেট রয়েছে যেমন আফ্রিকান, অ্যান্টার্কটিক, ইউরেশিয়ান, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকান, ভারত-অস্ট্রেলীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট। এবং কিছু ক্ষুদ্র প্লেটের রয়েছে যেমন আরব, ক্যারিবিয়ান, নাজকা স্কোটিয়া প্লেট এবং বার্মিজ প্লেট। কোনো কারণে এগুলোর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গটি শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর তখনো যদি যথেষ্ট শক্তি থাকে, তাহলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। এই কাঁপুনিই মূলত ভূমিকম্প।

ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূত্বকের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক ফল্ট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে থাকা ফাটলকে ফল্ট লাইন বলা হয়। তুরস্কের পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টের অবস্থান অ্যারাবিয়ান প্লেট ও আনাতোলিয়ান প্লেটের মাঝে। পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টকে বহু আগে থেকেই খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে সতর্ক করেছিলেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। একইভাবে বাংলাদেশ ইউরেশিয়ান এবং ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের মধ্যে অবস্থিত, যার কারণে এই অঞ্চলটি ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, এই প্লেটটি সক্রিয় রয়েছে। ভারতীয় প্লেটটি উত্তর-পূর্ব দিকে প্রতি বছর ৬ সেমি হারে এবং উত্তর ও পূর্বে ইউরেশিয়ান এবং বার্মিজ ক্ষুদ্র প্লেটটি নিচে যথাক্রমে প্রতি বছর ৪৫ মিমি এবং প্রতি বছর ৩৫ মিমি হারে সাব-ডাক্টিং করছে। তাছাড়া বাংলাদেশে কিছু সক্রিয় সিসমিক ফল্ট রয়েছে যেমন সীতাকুণ্ড-টেকনাফ ফল্ট, রাঙ্গামাটি-বরকল ফল্ট/চ্যুতি, মধুপুর ফল্ট/চ্যুতি, সিলেট- আসাম ফল্ট/চ্যুতি ইত্যাদি। সে জন্য ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা এই সব অঞ্চলে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করেছেন।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বাংলাদেশকে চারটি প্রধান ভূমিকম্প অঞ্চলে বিভক্ত;

জোন-০১: সিলেট-ময়মনসিংহের অঞ্চলসমূহ, যেখানে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রয়েছে ৭ রিখটার স্কেল;
জোন-০২: চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও রংপুরের কিছু এলাকায় , যেখানে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রয়েছে ৬ রিখটার স্কেল;
জোন-০৩: কুমিল্লা, ঢাকা, দিনাজপুর, নাটোর ও খুলনার কিছু এলাকায়, যেখানে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রয়েছে ৬ রিখটার স্কেল;
জোন-০৪: যশোর, বরিশাল, রাজশাহ ‘র কিছু এলাকায়, যেখানে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রয়েছে ৫ রিখটার স্কেল;

এছাড়াও কতগুলো কারণে ভূমিকম্প হতে পারে,  যেমন: ভূগর্ভস্থ প্রবল বাষ্পচাপ; ভূ-সংকোচন অথবা প্রসারণ; খনিজ পদার্থের মাত্রারিক্ত উত্তোলন; অধিক পলি উৎপাদন; ভূ-গর্ভস্থ পানির মাত্রারিক্ত ব্যবহার।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস
যদিও সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশ কোনো বড় ধরনের ভূমিকম্পে হয়নি, তবে এই অঞ্চলে বড় আকারের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে এবং এর আশেপাশে অতীতের বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে যেমন; ১৫৪৮ সালের ভূমিকম্প যা সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত করেছিল, ১৬৪২ সালের ভূমিকম্পে সিলেট জেলায় বিভিন্ন ভবনের ও কাঠামোর ক্ষতি হয়েছিল, ১৭৬২ সালের ভূমিকম্পে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ অংশে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল, ১৮৯৭ সালে এই অঞ্চলে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল যা, গ্রেট ইন্ডিয়া ভূমিকম্প নামে পরিচিত। এই ভূমিকম্পে সিলেট শহরে ভবনের মারাত্মক ক্ষতি হয়, যেখানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪৫। 

১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই ৭.৬ মাত্রার বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল যেটি শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প নামে পরিচিত । এর কেন্দ্রস্থল ছিল শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারে।

১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর চট্টগ্রামে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত এনেছিল, এটি বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলে ঘটেছিল। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের দক্ষিণ মিজোরামে। ভারতের মিজোরামে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটি ৫ তলা ভবন ধসে ২৫ জন নিহত হয়েছে।

১৯৯৯ সালের ২২ জুলাই, মহেশখালী দ্বীপে একটি ভূমিকম্প হয়েছিল যার কেন্দ্রস্থল ছিল একই স্থানে, ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পটি মহেশখালী দ্বীপ এবং সংলগ্ন সমুদ্রের চারপাশে তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছিল। ঘরবাড়ি ফাটল এবং কিছু বাড়িঘর ধসে পড়েছে।

২০০৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত এনেছিল, এটি কেন্দ্র ছিল দক্ষিণ-পূর্ব কাপ্তাই জলাধারের পূর্ব পাড়ে। এই ভূমিকম্প বোরকোল ভূমিকম্প নামে পরিচিত। এই ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে তিনজন নিহত, ২৫ জন আহত এবং প্রায় ৫০০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্থ  হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মদুনাঘাট গ্রিড সাবস্টেশনে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকায় এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৪। এই মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা শহর কেঁপে ওঠে। উঁচু ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরে।

ভূমিকম্পের প্রবণতা ও ঝুঁকি
তুরস্ক-সিরিয়ার মতো বাংলাদেশও ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। বাংলাদেশে ৪-৫টি সচল ফল্ট লাইন আছে। ১৮৯৭ সালে এই অঞ্চলে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল যা, গ্রেট ইন্ডিয়া ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সেই ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকম্পগুলোকে আমাদের দেশে সংঘটিত ভূমিকম্পের তুলনায় ছোটই বলা যায়। ভূমিকম্পের রিটার্ন পিরিয়ড ধরা হয় ১৫০-২০০ বছর। সে হিসেবে সাইকেলটি এখনো ফিরে আসেনি। সেটি কখন হবে কেউ জানে না। আসলে ভূমিকম্পের পূর্বানুমান করা সম্ভব না। পরিসংখ্যানগত রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে যে গত ৫০ বছরে ভূমিকম্পের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে ঘন ঘন হালকা কম্পন একটি সংকেত দেয় যে একটি শক্তিশালী কম্পন আসছে, যা সবার জন্য উদ্বেগের বিষয়। তার জন্য আমাদের আতংকিত না হয়ে প্রস্ততি নিতে হবে, ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকি বিষয়গুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা্ নিতে হবে।

বিল্ডিং হল অন্যতম প্রধান উপাদান যা ভূমিকম্পের সময় বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সম্প্রতী ঘটে যাওয়া তুরস্কের ভূমিকম্পে প্রায় ১ লক্ষ ভবন ধসে পরে, তার কারণ হিসেবে দেখা যায় ঐ শহরের বিদ্যমান পুরাতন বিল্ডিংগুলির খুব কম রেট্রোফিটিং (মজবুতিকরণ) হয়েছে এবং নতুন বিল্ডগুলিতে বিল্ডিং স্ট্যান্ডার্ডগুলির খুব কম প্রয়োগ করা হয়েছে বলে মতামত দিয়েছেন অক্সফোডের গবেষক প্রফেসর এলেক্সজেন্ডার। চুয়েটের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ৭৮ শতাংশ ভবন বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) লঙ্ঘন করে নির্মিত হয়েছে। এবং ধারনা করা হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৭০শতাংশ উচ্চ ভবন ধসে পড়বে যদি রিখটার স্কেলে ৭-৮ মাত্রার ভূমিকম্প চট্টগ্রাম শহরে আঘাত হানে। সেই তুলনায় রাজধানীর ঢাকায় আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমাদের দেশের পুরনো ২-৩ বা ৫ তলার যেসব ভবন আছে, যেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় নয়, সেক্ষেত্রে এখনই সে ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ভূমিকম্প অপ্রত্যাশিত, অনিয়ন্ত্রিত এবং আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলি এখনো চিহ্নিত করা হয়নি । এবংভূমিকম্প মোকাবেলায় আমাদের জনগণের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিল্ডিং কোড না মেনে চলা এবং বাসিন্দাদের ভূমিকম্পে সাড়াঁ দেবার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, শহর এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়াও, আমাদের শহরগুলোতে রাস্তাগুলো তুরস্ক ও সিরিয়ার রাস্তার মতো এত চওড়া না,  শুধু চিপা গলি আর গলি। আমাদের পুরান ঢাকা ও চট্টগ্রামের যদি ভূমিকম্প হয়, দেখা যাবে সেখানে উদ্ধারকর্ম পরিচালনা করার জন্য কোনো গাড়িই বা যন্ত্রপাতি ঢুকতে পারবে না। ফলে উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হবে, ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে যে পরিমাণ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশি প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে, উদ্ধার অভিযানের দীর্ঘতা ও সরঞ্জমাদির অভাবে। তাই আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে..!

ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও মোকাবেলায় আমাদের করণীয়
আমার একটি গবেষণায় দেখিছি, চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ ভবন ভূমিকম্পের জন্য মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও মাত্র ৪ শতাংশ মানুষের ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখে । এবং গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে মাত্র ৩২ শতাংশ বিল্ডিংগুলিতে অগ্নি সুরক্ষা সরঞ্জাম রয়েছে এবং কোনও ভবনে জরুরি বহির্গমন সুবিধা নেই। সুতরাং, এই নিরাপত্তা সরঞ্জাম, সুবিধা এবং জ্ঞানের অনুপস্থিতি শহরে এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকির মাত্রা অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। সুতরাং ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদেরকে প্রথমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলির ম্যাপিং করতে হবে। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিংগুলিকে রেট্রোফিটিং (মজবুতিকরণ) নিশ্চিতকরণ করতে হবে এবং নতুন বিল্ডগুলিতে বিল্ডিং স্ট্যান্ডার্ড  বা বিল্ডিং কোড সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরি করতে হবে। জাপানের ভূমিকম্প প্রমাণ পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরন করা যেতে পারে। কর্তৃপক্ষকে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোট চলমান করে দেখতে হবে, বিল্ডিংগুলো অনুমোদিত প্লানে যেমন ছিল বাস্তবে সেরকম আছে কিনা।

ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে, প্রয়োজনীয় ও আধুনিক সরঞ্জাম কিনে দিতে হবে। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং ওয়ার্ড অফিসে কিছু সরঞ্জাম রেখে দিতে হবে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) মত আমাদের মহল্লায় মহল্লায়ও এরকম ভূমিকম্প প্রস্তুতি কর্মসূচি করা চালু করতে হবে, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে ক্যাম্পেইন আয়োজন করতে হবে। ভূমিকম্প নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভূমিকম্প বিষয়ে জ্ঞানের চর্চা ও বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহারে সমন্বয় করতে হবে। ভূমিকম্প নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমূহ প্রজেক্ট তৈরী ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় ফান্ডিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। বেসরকারি  উন্নয়ন সংস্থাগুলো সরকারের সাথে সমন্বয় করে ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন মহড়া (মকড্রিল) আয়োজন করতে হবে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের এই মহড়া (মকড্রিল) নিমন্ত্রণ করতে হবে। স্থানীয় কমিউনিটিকে ভূমিকম্পে সাড়াদানে ক্ষমতায়িত করতে হবে, কিছু সরঞ্জাম তাদের কাছে রেখে দিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে তা ব্যবহারের চর্চা করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে এই সমস্ত বিষয়গুলোকে সমন্বয় করতে হবে। প্রয়োজনে ভূমিকম্প নিয়েই সরকারের আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে হবে, যে প্রতিষ্ঠান শুধু ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলার কাজ করবে।

সূত্র:
https://bangla.thedailystar.net/environment/climate-change/natural-disasters/news-448236
https://www.un.org/en/t%C3%BCrkiye-syria-earthquake-response?
https://www.prothomalo.com/world/middle-east/d109g4mybl
https://nagorikvoice.com/16718/
https://www.bbc.com/news/science-environment-64540696
https://www.bbc.com/news/64568826





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন